- Back to Home »
- Adsense »
- আউটসোর্সিং-এ সফল ব্যক্তিত্ব সাঈদ ইসলাম
Sunday, August 25, 2013
সাঈদ ইসলাম। বাংলাদেশে আউটসোর্সিং-এ
সামনের সারি থেকে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি তাদের একজন। পেশায় একজন তথ্য
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। দেশে ও দেশের বাইরে প্রযুক্তির নানা ক্ষেত্রে তার
পদচারণা রয়েছে। দক্ষতা অর্জন করেছেন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার,
ওপেন সোর্স, লিনাক্স, ভিওআইপি এবং টেলিফোন বিলিং সিস্টেমের ওপর। পড়াশোনা
করেছেন কানাডা থেকে। সফলতার সাথে বিগমাসটেক কমিউনিকেশনস লি: নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে আউটসোর্সিং-এ আয় করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন প্রিয়.কমের সাথে। সাঈদ ইসলাম সম্পর্কে আরও জানতে তার ফেসবুক পেজ অথবা লিঙ্কড ইনে যোগ দিতে পারেন।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
সাঈদ ইসলাম প্রিয়.কমের সাথে আলাপ কালে প্রযুক্তি নিয়ে তার ছোট থেকে বেড়ে ওঠা এবং অনেক পাওয়া না পাওয়ার গল্প বলেছেন। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে কারিগরী বিষয়ক যেকোন ব্যাপারেই আমার কৌতূহল ছিল। কানাডায় ছাত্রাবস্থায় ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত একটি কম্পিউটার কেনার সামর্থ্য আমার কখনও ছিল না। বিধায় কম্পিউটার আছে এমন কাউকে পেলে তার সাথে বন্ধুত্ব জুড়ে দিতাম আর সে সুবাদে তার কম্পিউটারটি ব্যবহারের সুযোগ হত।
২০০১ সালে পার্ট টাইম হেল্প ডেস্ক/টেকনিক্যাল সাপোর্ট হিসেবে আমার কম্পিউটার পেশার যাত্রা শুরু। তখন উইন্ডোজ সিস্টেম নিয়েই কাজ করতাম আর পাশাপাশি ঘরে ছোট আকারে ল্যাব বানিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে রিসার্চ করে সেগুলো প্র্যাকটিস করতাম। বিশেষ করে টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম। চাকরিরই পাশাপাশি শুরু করি টরেন্টোর ছোট-খাট লিনাক্স ও অ্যাপেল সিস্টেম নির্ভর প্রতিষ্ঠান গুলোকে সাপোর্ট দেয়া। এভাবে আমি লিনাক্স, ভিওআইপি এবং টেলিফোন বিলিং সিস্টেম এ বেশ পারদর্শী হতে থাকি। হঠাৎ করে একদিন স্বল্প ব্যয়ে টেলিফোন সার্ভিস দেয় এমন এক মাঝারি সাইজ এর প্রতিষ্ঠান জি-৩ টেলিকম-এ চাকরির প্রস্তাব পাই। চাকরিতে যোগদানের পর ওখান থেকে আমি টিডিএম সুইচ, সিসকো নেটওয়ার্কিং ও অ্যাডভান্স বিলিং শেখার সুযোগ পাই যা আইটি জগতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এরপর ২০০৫ থেকে ২০০৯ এর শুরুর দিক পর্যন্ত আমি ওখানকার বড় বড় দুটি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র লিনাক্স সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পদে চাকরি করি এবং শিখি অ্যাডভান্স সিস্টেম টেকনোলজি। যা বিশেষ করে সরকারি, ব্যাংক, টেলিফোন অপারেটর এবং গ্রুপ অফ কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবহার হয়। এর পাশাপাশি চুক্তি ভিত্তিক কাজ করতে থাকি ২০০৬ পর্যন্ত।
২০০৯ সালের মার্চ মাস। উত্তর আমেরিকার ১০ দশ বছরের তথ্য প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে বাংলাদেশ উন্নয়নের অংশীদার হবো এই পরিকল্পনা নিয়ে আমার সর্বশেষ কর্মস্থল কানাডার একটি অনলাইন গেমিং প্রতিষ্ঠান এ। যারা শিশু কিশোরদের জন্য গেইমস তৈরি করে, তাদের থেকে ছয় মাস মেয়াদী বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা যাবে এমন একটি চুক্তি ভিত্তিক আইটি কনসালটেন্সি কাজ নিই আর সেটাকে পুঁজি করে দেশে ফিরে আসি। বাংলাদেশ থেকে টানা দেড় বছর প্রতিষ্ঠানটিকে আইটি সেবা প্রদান শেষে আমাকে প্রস্তাব করা হলো কানাডা ফিরে গিয়ে তাদের অফিস থেকে কাজ করতে। আমি সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে দেশেই থেকে যাবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিই।
এর মাঝে হটাৎ করে গুগল থেকে ইমেইল পাই সিনিয়র সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং পদে চাকরির জন্য। উত্তেজনাময় অবস্থায় প্রস্তুতিহীন ভাবেই দুই ধাপ টেলিফোন ইন্টারভিউ দেই। তৃতীয় ধাপে এসে কর্মস্থল হিসেবে আমাকে জিজ্ঞেস করা হলে আমি পার্শ্ববর্তী দেশে ভারতকে বেছে নিই। কারণ ভারত বাংলাদেশের সব চেয়ে নিকটবর্তী দেশ যা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া আসার জন্য সহজ। দুর্ভাগ্য বশত আমাকে জানানো হয় যে তাঁদের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং টিম শুধু মাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের জন্য প্রযোজ্য। চাকরিটা হলে আরও বিশেষ কাজ শেখা আমার জন্য হতো সুবর্ণ সুযোগ।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং-এ কিভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন এবং কার উৎসাহে উৎসাহিত হয়েছিলেন?
সাঈদ ইসলাম: ২০০৬ সাল থেকেই আমি কানাডা থেকে ফেরত এসে বাংলাদেশে স্থায়ী ভাবে বসবাস করার জন্য চেষ্টা করতে থাকি। অবশেষে ২০০৯ সালের মার্চ মাসে স্থায়ী ভাবে দেশে ফেরার পর ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমার এক ছোট ভাই রাকিব এর মাধ্যমে ওডেস্ক সম্পর্কে জানতে পাই। তার যথেষ্ট উৎসাহে আমি ওডেস্ক এর সাথে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হয়ে যাবার চেষ্টা চালানো শুরু করে দেই। আমার অভিজ্ঞতা অথবা দক্ষতা অনুযায়ী পছন্দ মত কাজ যেমন অ্যাডভান্স সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং/এডমিনিস্ট্রেশন/আর্কিটেকচার ও ক্লাউড কম্পিউটিং এর কাজ ওডেস্ক ক্যাটাগরির তালিকায় খুবই কম। এর হার ৫ শতাংশ বলা যেতে পারে। সংখ্যার হার কম থাকলেও হাল না ছেড়ে টানা এক মাস চেষ্টার পর ২য় মাসে মোটামুটি একটি মনের মতো কাজ পেয়ে যাই আর সেখান থেকে আমার ওডেস্ক বা আউটসোর্সিং জীবন শুরু।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং-এ সাধারণত কি কাজ করেন?
সাঈদ ইসলাম: আমি একজন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট এবং ওপেন সোর্স প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। আমার অভিজ্ঞতা অথবা দক্ষতা অনুযায়ী পছন্দ মত কাজ যেমন অ্যাডভান্স সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং/এডমিনিস্ট্রেশন/আর্কিটেকচার ও ক্লাউড কম্পিউটিং বিষয়ক কাজ করে থাকি। এছাড়াও ওপেন সোর্স প্রযুক্তি ভিত্তিক যেকোনো কাজসহ সিস্টেম ডিজাইন, ডেপলয়মেন্ট, ইন্টিগ্রেশন, ম্যানেজমেন্ট, ট্রাবলশুটিং ও অটোমেশন আমার কাজের অন্তর্ভুক্ত।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে প্রথম ধারণা পেলেন কিভাবে?
সাঈদ ইসলাম: ২০০৫ এর শেষের দিকে আমি এই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাই। এবং এর ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে সার্ভিসসহ সফটওয়্যার তৈরি করিয়ে উত্তর আমেরিকার বাজারে রপ্তানি করার লক্ষে ২০০৬ সালে ঢাকার মহাখালী এলাকায় বিগমাসটেক কমিউনিকেশনস লিঃ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করি। যা তখন আমি কানাডা থেকে নিয়ন্ত্রণ করতাম। এরপর ২০১০ সালে যখন থেকে ওডেস্ক মার্কেটপ্লেইস কাজ সংগ্রহ করা শুরু করি তখন থেকে এই আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা পাই।
প্রিয় টেক: এই ইন্ডাস্ট্রিতে এখন পর্যন্ত আপনার অর্জন কতটুকু?
সাঈদ ইসলাম: আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রিতে তথ্য প্রযুক্তি সম্পৃক্ত মূলধারার কাজের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে খুবই কম। অর্থাৎ উন্নত বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান গুলোর সম্পৃক্ততা এই আউটসোর্সিং মার্কেট প্লেসের সাথে তেমন দেখা যায় না। এতে করে আমার তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা উচ্চতর কাজের ক্ষেত্রে ব্যাবহার করার সুযোগ এখনও মনের মতো করে হয়নি। তবে অন্যান্যদের তুলনায় আমার অর্জন বেশ ভালো। উল্লেখ্য যে, গুগল ইতিমধ্যে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কাজ করানো শুরু করেছে তবে কি ধরণের কাজ করিয়ে যাচ্ছে তা আমার এখন পর্যন্ত জানা নেই।
প্রিয় টেক: এখান থেকে আয় করা প্রথম টাকা কিভাবে পেয়েছিলেন?
সাঈদ ইসলাম: আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম মার্কেট প্লেস ওডেস্ক থেকে আয় করা টাকা প্রাথমিক ভাবে তাদের অ্যাকাউন্টে জমা থাকে যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর উত্তোলন করা যায়। আমি প্রথম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ওয়্যার ট্রান্সফারের মাধ্যমে আমার এইচএসবিসি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসছি যাতে সময় লাগে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মতো। এতে করে ওয়্যার ট্রান্সফার চার্জ হিসেবে প্রতি বার আমাকে ৩০ ডলার করে দিতে হয়।
প্রিয় টেক: প্রথম টাকা পেতে কি কোনো বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন?
সাঈদ ইসলাম: যেহেতু আমি বাংলাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা আনার পদ্ধতি ও সম্ভাব্য বিড়ম্বনার ওপর যথেষ্ট খোঁজখবর করেছিলাম এবং সে অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছিলাম। সেহেতু আমাকে কোন প্রকার বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়নি।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম কোন কাজ করেছেন এবং প্রথম পেমেন্ট কত পেয়েছিলেন?
সাঈদ ইসলাম: প্রথম কাজটি সিস্টেম ইনফ্রাষ্ট্রাকচার মাইগ্রেশন ভিত্তিক। দুই মাস নাগাদ কাজটি করার পর যে পেমেন্ট পেয়েছিলাম তা কানাডার সমমানের চাকরির বেতনের কাছাকাছি। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে ভাল পেমেন্ট শুধু দক্ষতার ভিত্তিতে সম্ভব।
প্রিয় টেক: প্রথম টাকা পাওয়ার অনুভূতি কেমন ছিলো?
সাঈদ ইসলাম: আউটসোর্সিং থেকে প্রাপ্ত প্রথম পেমেন্টের টাকা আমাকে আরও উৎসাহিত করে এবং পর্যাপ্ত আত্মবিশ্বাস যোগায়।
প্রিয় টেক: বাংলাদেশ থেকে আউটসোর্সিং নিয়ে কাজ করার সম্ভাবনা কেমন?
সাঈদ ইসলাম: আউটসোর্সিং কাজের সম্ভাবনার কথা বলতে গেলে গেলে আমি বলবো এটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময়। একটি বিশেষ ক্ষেত্র যা অদূর ভবিষ্যতে বর্তমানের বিপুল লাভজনক গার্মেন্টস শিল্পের সাথে তুলনীয়, তবে এক্ষেত্রে সরকারসহ সবার সহায়তা ও সচেতনতা প্রয়োজন।
প্রিয় টেক: বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির মন্দ দিক কোন গুলো?
সাঈদ ইসলাম: প্রধানত বিদ্যুৎ সহ ধীর গতির অনিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট। এছাড়া তুলনামূলক ভাবে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিসের মূল্য বেশি।
প্রিয় টেক: আপনার কাছে দেশের তথ্য প্রযুক্তির ভালো দিকগুলো কি কি?
সাঈদ ইসলাম: বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির ভালো দিকগুলো বলতে না পারলেও প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে আমরা সঠিক পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার অভাবে তাদের থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে আছি।
প্রিয় টেক: তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির জন্য সরকারের কি কি করা উচিত?
সাঈদ ইসলাম: প্রথমত সরকারকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট নিশ্চয়তার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। অতঃপর বর্তমান তথ্য প্রযুক্তি সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানে ও ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলতা চিহ্নিত করে তা সংস্করণ করতে হবে। যে সকল প্রকল্প বাস্তবায়নে সঠিক পরিকল্পনা ছিল না তা সনাক্ত করে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
প্রিয় টেক: ইন্টারনেটেই যেহেতু আয় তো বাংলাদেশের ইন্টারনেট সার্ভিস নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট?
সাঈদ ইসলাম: আমার সামর্থ্য সাধ্য অনুযায়ী ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে আমি একাধিক সংযোগ রাখি। সন্তুষ্ট হবার কাছাকাছি থাকি কিন্তু সাধারণ ব্যবহারকারীদের কথা বিবেচনা করলে এটি সন্তোষজনক নয়।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং এর কাজগুলো সাধারণত কোন সময় করেন?
সাঈদ ইসলাম: বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্লায়েন্ট শিডিউল অথবা প্রোজেক্ট ডেডলাইন অনুসারে নিজের সময় মতো করি। তবে কিছু কিছু কাজের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট এর অফিস টাইম এর সাথে মিলিয়ে কাজ করতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের সময় অনুযায়ী দুপুর দুইটা থেকে ইউরোপিয়ান ক্লায়েন্ট এর জন্য এবং সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত দুইটা বা চারটা পর্যন্ত কাজ করে থাকি।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কোন প্রতিবন্ধকতায় বেশি পড়েছেন?
সাঈদ ইসলাম: অনিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ এর কারণে বেশ কিছু সময়ে ক্লায়েন্টদেরকে মানসম্পন্ন সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছি এবং পরিশেষে বেশ কিছু ক্লায়েন্ট হারিয়েছি।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং এর কাজ কি একাই করেন নাকি দলগত করেন?
সাঈদ ইসলাম: আমি সাধারণত যে ধরণের কাজ করে থাকি সেগুলোর জন্য বাংলাদেশে দক্ষ মানুষের বেশ অভাব। ছয় সদস্য বিশিষ্ট ছোট একটি টিম আছে যারা আমার প্রতিষ্ঠান বিগমাসটেকে কর্মরত। টিমের সদস্যদেরকে আমি নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি এবং তাঁরা অসাধারণ কাজ করছে। এদের মধ্যে সুশান্ত কুমার রায়, কামরুন নাহার ও শাফরিনা এর কথা না বললেই নয়। কাজের ধরণ বিশেষে বেশির ভাগ কাজই আমার নিজেকেই করতে হয়। তারপরও আমার টিম আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করে থাকে।
প্রিয় টেক: বাংলাদেশের আউটসোর্সিং সার্ভিস প্রভাইডারদের সবচেয়ে বড় সমস্যা কোনটি বলে মনে করেন?
সাঈদ ইসলাম: যারা সফলতার সাথে আউটসোর্সিং এর কাজগুলো করতে পারছে না তাদের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে তাদের এই ইন্ডাস্ট্রির উপর পূর্ণ ধারণার অভাব রয়েছে এবং সাথে ধৈর্যেরও ঘাটতি আছে ।
প্রিয় টেক: বায়াররা বাংলাদেশী আউটসোর্সিং সার্ভিস প্রভাইডারদের কেমন মূল্যায়ন করে বলে মনে করেন?
সাঈদ ইসলাম: তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক মূলধারার ও সমমানের কাজের ক্ষেত্রে বিদেশী ক্লায়েন্টরা সাধারণত বাংলাদেশীদের কাজের মানের উপর নির্ভর করতে সংকোচবোধ করে। কেননা আমাদের দেশের বেশির ভাগ পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট ষ্ট্যাণ্ডার্ড অনুযায়ীয় কাজের গুনাগুণ মাণ নিশ্চিত করার জ্ঞান কম।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং সার্ভিসে ভালো পারফরমেন্স করার জন্য কি কি যোগ্যতা থাকা উচিত?
সাঈদ ইসলাম: দক্ষতা নিশ্চিত করে ক্লায়েন্টের কাঙ্ক্ষিত মানসম্পন্ন কাজের সেবা দিতে হবে। ক্লায়েন্ট সন্তুষ্টি নিশ্চিত করে তার থেকে কিভাবে ভাল রেটিং ও ফিডব্যাক পাওয়া যায় এর দিকে নজর দিতে হবে। যা পরবর্তীতে কাজ পেতে বিশেষ ভাবে সহায়তা করবে।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং সার্ভিসে যারা নতুন তাদের জন্য কি পরামর্শ দিবেন?
সাঈদ ইসলাম: কাজ জানা না থাকলে আগে কাজ শিখতে হবে এবং দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। তারপর আউটসোর্সিং উপর পর্যাপ্ত রিসার্চ যা এই ক্ষেত্রটির উপর পূর্ণ ধারণা দিবে। শুরুতে কত অর্থ উপার্জন করা যাবে তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে প্রথম কাজটি কিভাবে পাওয়া যায় সেটির জন্য ধৈর্য সহকারে যথেষ্ট চেষ্টা করতে হবে।
সাঈদ ইসলাম প্রিয়.কমের সাথে আলাপ কালে প্রযুক্তি নিয়ে তার ছোট থেকে বেড়ে ওঠা এবং অনেক পাওয়া না পাওয়ার গল্প বলেছেন। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে কারিগরী বিষয়ক যেকোন ব্যাপারেই আমার কৌতূহল ছিল। কানাডায় ছাত্রাবস্থায় ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত একটি কম্পিউটার কেনার সামর্থ্য আমার কখনও ছিল না। বিধায় কম্পিউটার আছে এমন কাউকে পেলে তার সাথে বন্ধুত্ব জুড়ে দিতাম আর সে সুবাদে তার কম্পিউটারটি ব্যবহারের সুযোগ হত।
২০০১ সালে পার্ট টাইম হেল্প ডেস্ক/টেকনিক্যাল সাপোর্ট হিসেবে আমার কম্পিউটার পেশার যাত্রা শুরু। তখন উইন্ডোজ সিস্টেম নিয়েই কাজ করতাম আর পাশাপাশি ঘরে ছোট আকারে ল্যাব বানিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে রিসার্চ করে সেগুলো প্র্যাকটিস করতাম। বিশেষ করে টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম। চাকরিরই পাশাপাশি শুরু করি টরেন্টোর ছোট-খাট লিনাক্স ও অ্যাপেল সিস্টেম নির্ভর প্রতিষ্ঠান গুলোকে সাপোর্ট দেয়া। এভাবে আমি লিনাক্স, ভিওআইপি এবং টেলিফোন বিলিং সিস্টেম এ বেশ পারদর্শী হতে থাকি। হঠাৎ করে একদিন স্বল্প ব্যয়ে টেলিফোন সার্ভিস দেয় এমন এক মাঝারি সাইজ এর প্রতিষ্ঠান জি-৩ টেলিকম-এ চাকরির প্রস্তাব পাই। চাকরিতে যোগদানের পর ওখান থেকে আমি টিডিএম সুইচ, সিসকো নেটওয়ার্কিং ও অ্যাডভান্স বিলিং শেখার সুযোগ পাই যা আইটি জগতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এরপর ২০০৫ থেকে ২০০৯ এর শুরুর দিক পর্যন্ত আমি ওখানকার বড় বড় দুটি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র লিনাক্স সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পদে চাকরি করি এবং শিখি অ্যাডভান্স সিস্টেম টেকনোলজি। যা বিশেষ করে সরকারি, ব্যাংক, টেলিফোন অপারেটর এবং গ্রুপ অফ কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবহার হয়। এর পাশাপাশি চুক্তি ভিত্তিক কাজ করতে থাকি ২০০৬ পর্যন্ত।
২০০৯ সালের মার্চ মাস। উত্তর আমেরিকার ১০ দশ বছরের তথ্য প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে বাংলাদেশ উন্নয়নের অংশীদার হবো এই পরিকল্পনা নিয়ে আমার সর্বশেষ কর্মস্থল কানাডার একটি অনলাইন গেমিং প্রতিষ্ঠান এ। যারা শিশু কিশোরদের জন্য গেইমস তৈরি করে, তাদের থেকে ছয় মাস মেয়াদী বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা যাবে এমন একটি চুক্তি ভিত্তিক আইটি কনসালটেন্সি কাজ নিই আর সেটাকে পুঁজি করে দেশে ফিরে আসি। বাংলাদেশ থেকে টানা দেড় বছর প্রতিষ্ঠানটিকে আইটি সেবা প্রদান শেষে আমাকে প্রস্তাব করা হলো কানাডা ফিরে গিয়ে তাদের অফিস থেকে কাজ করতে। আমি সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে দেশেই থেকে যাবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিই।
এর মাঝে হটাৎ করে গুগল থেকে ইমেইল পাই সিনিয়র সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং পদে চাকরির জন্য। উত্তেজনাময় অবস্থায় প্রস্তুতিহীন ভাবেই দুই ধাপ টেলিফোন ইন্টারভিউ দেই। তৃতীয় ধাপে এসে কর্মস্থল হিসেবে আমাকে জিজ্ঞেস করা হলে আমি পার্শ্ববর্তী দেশে ভারতকে বেছে নিই। কারণ ভারত বাংলাদেশের সব চেয়ে নিকটবর্তী দেশ যা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া আসার জন্য সহজ। দুর্ভাগ্য বশত আমাকে জানানো হয় যে তাঁদের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং টিম শুধু মাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের জন্য প্রযোজ্য। চাকরিটা হলে আরও বিশেষ কাজ শেখা আমার জন্য হতো সুবর্ণ সুযোগ।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং-এ কিভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন এবং কার উৎসাহে উৎসাহিত হয়েছিলেন?
সাঈদ ইসলাম: ২০০৬ সাল থেকেই আমি কানাডা থেকে ফেরত এসে বাংলাদেশে স্থায়ী ভাবে বসবাস করার জন্য চেষ্টা করতে থাকি। অবশেষে ২০০৯ সালের মার্চ মাসে স্থায়ী ভাবে দেশে ফেরার পর ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমার এক ছোট ভাই রাকিব এর মাধ্যমে ওডেস্ক সম্পর্কে জানতে পাই। তার যথেষ্ট উৎসাহে আমি ওডেস্ক এর সাথে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হয়ে যাবার চেষ্টা চালানো শুরু করে দেই। আমার অভিজ্ঞতা অথবা দক্ষতা অনুযায়ী পছন্দ মত কাজ যেমন অ্যাডভান্স সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং/এডমিনিস্ট্রেশন/আর্কিটেকচার ও ক্লাউড কম্পিউটিং এর কাজ ওডেস্ক ক্যাটাগরির তালিকায় খুবই কম। এর হার ৫ শতাংশ বলা যেতে পারে। সংখ্যার হার কম থাকলেও হাল না ছেড়ে টানা এক মাস চেষ্টার পর ২য় মাসে মোটামুটি একটি মনের মতো কাজ পেয়ে যাই আর সেখান থেকে আমার ওডেস্ক বা আউটসোর্সিং জীবন শুরু।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং-এ সাধারণত কি কাজ করেন?
সাঈদ ইসলাম: আমি একজন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট এবং ওপেন সোর্স প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। আমার অভিজ্ঞতা অথবা দক্ষতা অনুযায়ী পছন্দ মত কাজ যেমন অ্যাডভান্স সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং/এডমিনিস্ট্রেশন/আর্কিটেকচার ও ক্লাউড কম্পিউটিং বিষয়ক কাজ করে থাকি। এছাড়াও ওপেন সোর্স প্রযুক্তি ভিত্তিক যেকোনো কাজসহ সিস্টেম ডিজাইন, ডেপলয়মেন্ট, ইন্টিগ্রেশন, ম্যানেজমেন্ট, ট্রাবলশুটিং ও অটোমেশন আমার কাজের অন্তর্ভুক্ত।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে প্রথম ধারণা পেলেন কিভাবে?
সাঈদ ইসলাম: ২০০৫ এর শেষের দিকে আমি এই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাই। এবং এর ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে সার্ভিসসহ সফটওয়্যার তৈরি করিয়ে উত্তর আমেরিকার বাজারে রপ্তানি করার লক্ষে ২০০৬ সালে ঢাকার মহাখালী এলাকায় বিগমাসটেক কমিউনিকেশনস লিঃ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করি। যা তখন আমি কানাডা থেকে নিয়ন্ত্রণ করতাম। এরপর ২০১০ সালে যখন থেকে ওডেস্ক মার্কেটপ্লেইস কাজ সংগ্রহ করা শুরু করি তখন থেকে এই আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা পাই।
প্রিয় টেক: এই ইন্ডাস্ট্রিতে এখন পর্যন্ত আপনার অর্জন কতটুকু?
সাঈদ ইসলাম: আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রিতে তথ্য প্রযুক্তি সম্পৃক্ত মূলধারার কাজের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে খুবই কম। অর্থাৎ উন্নত বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান গুলোর সম্পৃক্ততা এই আউটসোর্সিং মার্কেট প্লেসের সাথে তেমন দেখা যায় না। এতে করে আমার তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা উচ্চতর কাজের ক্ষেত্রে ব্যাবহার করার সুযোগ এখনও মনের মতো করে হয়নি। তবে অন্যান্যদের তুলনায় আমার অর্জন বেশ ভালো। উল্লেখ্য যে, গুগল ইতিমধ্যে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কাজ করানো শুরু করেছে তবে কি ধরণের কাজ করিয়ে যাচ্ছে তা আমার এখন পর্যন্ত জানা নেই।
প্রিয় টেক: এখান থেকে আয় করা প্রথম টাকা কিভাবে পেয়েছিলেন?
সাঈদ ইসলাম: আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম মার্কেট প্লেস ওডেস্ক থেকে আয় করা টাকা প্রাথমিক ভাবে তাদের অ্যাকাউন্টে জমা থাকে যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর উত্তোলন করা যায়। আমি প্রথম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ওয়্যার ট্রান্সফারের মাধ্যমে আমার এইচএসবিসি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসছি যাতে সময় লাগে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মতো। এতে করে ওয়্যার ট্রান্সফার চার্জ হিসেবে প্রতি বার আমাকে ৩০ ডলার করে দিতে হয়।
প্রিয় টেক: প্রথম টাকা পেতে কি কোনো বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন?
সাঈদ ইসলাম: যেহেতু আমি বাংলাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা আনার পদ্ধতি ও সম্ভাব্য বিড়ম্বনার ওপর যথেষ্ট খোঁজখবর করেছিলাম এবং সে অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছিলাম। সেহেতু আমাকে কোন প্রকার বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়নি।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম কোন কাজ করেছেন এবং প্রথম পেমেন্ট কত পেয়েছিলেন?
সাঈদ ইসলাম: প্রথম কাজটি সিস্টেম ইনফ্রাষ্ট্রাকচার মাইগ্রেশন ভিত্তিক। দুই মাস নাগাদ কাজটি করার পর যে পেমেন্ট পেয়েছিলাম তা কানাডার সমমানের চাকরির বেতনের কাছাকাছি। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে ভাল পেমেন্ট শুধু দক্ষতার ভিত্তিতে সম্ভব।
প্রিয় টেক: প্রথম টাকা পাওয়ার অনুভূতি কেমন ছিলো?
সাঈদ ইসলাম: আউটসোর্সিং থেকে প্রাপ্ত প্রথম পেমেন্টের টাকা আমাকে আরও উৎসাহিত করে এবং পর্যাপ্ত আত্মবিশ্বাস যোগায়।
প্রিয় টেক: বাংলাদেশ থেকে আউটসোর্সিং নিয়ে কাজ করার সম্ভাবনা কেমন?
সাঈদ ইসলাম: আউটসোর্সিং কাজের সম্ভাবনার কথা বলতে গেলে গেলে আমি বলবো এটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময়। একটি বিশেষ ক্ষেত্র যা অদূর ভবিষ্যতে বর্তমানের বিপুল লাভজনক গার্মেন্টস শিল্পের সাথে তুলনীয়, তবে এক্ষেত্রে সরকারসহ সবার সহায়তা ও সচেতনতা প্রয়োজন।
প্রিয় টেক: বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির মন্দ দিক কোন গুলো?
সাঈদ ইসলাম: প্রধানত বিদ্যুৎ সহ ধীর গতির অনিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট। এছাড়া তুলনামূলক ভাবে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিসের মূল্য বেশি।
প্রিয় টেক: আপনার কাছে দেশের তথ্য প্রযুক্তির ভালো দিকগুলো কি কি?
সাঈদ ইসলাম: বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির ভালো দিকগুলো বলতে না পারলেও প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে আমরা সঠিক পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার অভাবে তাদের থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে আছি।
প্রিয় টেক: তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির জন্য সরকারের কি কি করা উচিত?
সাঈদ ইসলাম: প্রথমত সরকারকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট নিশ্চয়তার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। অতঃপর বর্তমান তথ্য প্রযুক্তি সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানে ও ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলতা চিহ্নিত করে তা সংস্করণ করতে হবে। যে সকল প্রকল্প বাস্তবায়নে সঠিক পরিকল্পনা ছিল না তা সনাক্ত করে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
প্রিয় টেক: ইন্টারনেটেই যেহেতু আয় তো বাংলাদেশের ইন্টারনেট সার্ভিস নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট?
সাঈদ ইসলাম: আমার সামর্থ্য সাধ্য অনুযায়ী ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে আমি একাধিক সংযোগ রাখি। সন্তুষ্ট হবার কাছাকাছি থাকি কিন্তু সাধারণ ব্যবহারকারীদের কথা বিবেচনা করলে এটি সন্তোষজনক নয়।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং এর কাজগুলো সাধারণত কোন সময় করেন?
সাঈদ ইসলাম: বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্লায়েন্ট শিডিউল অথবা প্রোজেক্ট ডেডলাইন অনুসারে নিজের সময় মতো করি। তবে কিছু কিছু কাজের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট এর অফিস টাইম এর সাথে মিলিয়ে কাজ করতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের সময় অনুযায়ী দুপুর দুইটা থেকে ইউরোপিয়ান ক্লায়েন্ট এর জন্য এবং সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত দুইটা বা চারটা পর্যন্ত কাজ করে থাকি।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কোন প্রতিবন্ধকতায় বেশি পড়েছেন?
সাঈদ ইসলাম: অনিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ এর কারণে বেশ কিছু সময়ে ক্লায়েন্টদেরকে মানসম্পন্ন সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছি এবং পরিশেষে বেশ কিছু ক্লায়েন্ট হারিয়েছি।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং এর কাজ কি একাই করেন নাকি দলগত করেন?
সাঈদ ইসলাম: আমি সাধারণত যে ধরণের কাজ করে থাকি সেগুলোর জন্য বাংলাদেশে দক্ষ মানুষের বেশ অভাব। ছয় সদস্য বিশিষ্ট ছোট একটি টিম আছে যারা আমার প্রতিষ্ঠান বিগমাসটেকে কর্মরত। টিমের সদস্যদেরকে আমি নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি এবং তাঁরা অসাধারণ কাজ করছে। এদের মধ্যে সুশান্ত কুমার রায়, কামরুন নাহার ও শাফরিনা এর কথা না বললেই নয়। কাজের ধরণ বিশেষে বেশির ভাগ কাজই আমার নিজেকেই করতে হয়। তারপরও আমার টিম আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করে থাকে।
প্রিয় টেক: বাংলাদেশের আউটসোর্সিং সার্ভিস প্রভাইডারদের সবচেয়ে বড় সমস্যা কোনটি বলে মনে করেন?
সাঈদ ইসলাম: যারা সফলতার সাথে আউটসোর্সিং এর কাজগুলো করতে পারছে না তাদের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে তাদের এই ইন্ডাস্ট্রির উপর পূর্ণ ধারণার অভাব রয়েছে এবং সাথে ধৈর্যেরও ঘাটতি আছে ।
প্রিয় টেক: বায়াররা বাংলাদেশী আউটসোর্সিং সার্ভিস প্রভাইডারদের কেমন মূল্যায়ন করে বলে মনে করেন?
সাঈদ ইসলাম: তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক মূলধারার ও সমমানের কাজের ক্ষেত্রে বিদেশী ক্লায়েন্টরা সাধারণত বাংলাদেশীদের কাজের মানের উপর নির্ভর করতে সংকোচবোধ করে। কেননা আমাদের দেশের বেশির ভাগ পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট ষ্ট্যাণ্ডার্ড অনুযায়ীয় কাজের গুনাগুণ মাণ নিশ্চিত করার জ্ঞান কম।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং সার্ভিসে ভালো পারফরমেন্স করার জন্য কি কি যোগ্যতা থাকা উচিত?
সাঈদ ইসলাম: দক্ষতা নিশ্চিত করে ক্লায়েন্টের কাঙ্ক্ষিত মানসম্পন্ন কাজের সেবা দিতে হবে। ক্লায়েন্ট সন্তুষ্টি নিশ্চিত করে তার থেকে কিভাবে ভাল রেটিং ও ফিডব্যাক পাওয়া যায় এর দিকে নজর দিতে হবে। যা পরবর্তীতে কাজ পেতে বিশেষ ভাবে সহায়তা করবে।
প্রিয় টেক: আউটসোর্সিং সার্ভিসে যারা নতুন তাদের জন্য কি পরামর্শ দিবেন?
সাঈদ ইসলাম: কাজ জানা না থাকলে আগে কাজ শিখতে হবে এবং দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। তারপর আউটসোর্সিং উপর পর্যাপ্ত রিসার্চ যা এই ক্ষেত্রটির উপর পূর্ণ ধারণা দিবে। শুরুতে কত অর্থ উপার্জন করা যাবে তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে প্রথম কাজটি কিভাবে পাওয়া যায় সেটির জন্য ধৈর্য সহকারে যথেষ্ট চেষ্টা করতে হবে।