Popular Post

zwani.com myspace graphic comments

Sunday, August 25, 2013

ফ্রীল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং জগতে পদচারনা খুব বেশি দিনের নয় কিন্তু ফ্রীল্যান্সিং থেকেই ইতোমধ্যে খুঁজে পেয়েছি অনেক কিছু। জীবনকে বিশ্বাস করতে শিখেছি। শিখেছি কিভাবে হাহাকারময় চাকুরীর বাঁজারে নিজেকে প্রমাণ করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায়। স্বপ্ন দেখতে শিখেছি এবং পেয়েছি পরিশ্রম দিয়েই নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার নির্ভরযোগ্য প্লাটফর্ম।
পড়াশোনা করছি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ শেষ বর্ষে। ফ্রীল্যান্সিং এর পাশাপাশি নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। সাথে আছে আরো কিছু স্বপ্নবান সঙ্গী। আমার ফ্রীল্যান্সার থেকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার ব্যক্তিগত কিছু কথা, কিছু স্বপ্নের কথা শেয়ার করার জন্যই আজকের এই লেখা।
শুরুর কথা
কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ায় কিছু দক্ষতা হয়ত ছিল কিন্তু ছিলোনা তেমন আত্মবিশ্বাস। কারন চার বছরের গ্রাজুয়েশন কোর্সের চার বছর শেষ হলেও নিজেকে আবিষ্কার করলাম তৃতীয় বর্ষের শুরুতে। না দোষ কিন্তু আমার না! দোষ হয়ত শিক্ষ্যাব্যবস্থার। যেকারনে চিন্তা শুরু হয়েছিল কিছু একটা করার কারন চাকুরীর বাজারও তেমন আশাব্যাঞ্জক বলে কারো মুখে শুনিনি। তাছাড়া পড়াশোনা শেষ করার আগে ভাল চাকুরি শুরুর কথা স্বপ্নেও ভাবা যায়না। তারপরে আবার “অভিজ্ঞতা” নামক প্রহসন।
এসব কারনেই “কিছু একটা” করার চিন্তায় যখন ঘুরছিলাম তখন দেখতাম অনেকেই ফ্রীল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং করে নিজের খরচ নিজে বহন করছে। ২০১১ এর শুরুর দিকে নিজে নিজেই ব্যাপারটা নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করে মার্কেটপ্লেসগুলো সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সংগ্রহ করলাম। যেমন মার্কেটপ্লেসগুলো কি, এখানে কীভাবে কাজ করা হয়, কীভাবে টাকা পাওয়া যায় ইত্যাদি।
এরপর প্রাথমিক ধারণা অর্জনের পর শুরু ওডেস্ক এবং ফ্রীল্যান্সারে অ্যাকাউন্ট করে ফেললাম। নিজের প্রয়োজনীয় তথ্য এবং কয়েকটা সাধারণ টেস্ট বা পরীক্ষা দিয়ে প্রোফাইলটাও তৈরি করে ফেলি।
নিজেকে তৈরি করা
প্রোফাইল তৈরির পর মার্কেটপ্লেসগুলোতে জমা হওয়া কাজগুলো দেখতে থাকলাম। দেখা গেল সাধারণ কাজগুলো আমি পারি কিন্তু তাতে টাকার পরিমাণ কম। আর একটু কঠিন কাজগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলেও কাজ শুরু করার মত তৈরি ছিলাম না। তাই নিজেকে আরেকটু ঝালাই করে নেয়া শুরু করলাম। নেটওয়ার্কিং এর কোর্স (CCNA) করা ছিল কিন্তু এই বিষয়ে পোস্ট হওয়া কাজগুলো বুঝতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল তাই ওয়েব ডেভলপমেন্ট নিয়ে কাজ শুরু করলাম। এইচটিএমএল, সিএসএস জাভাস্ক্রিপ্ট এবং পিএইচপি ঝালাই করে নিলাম। উল্লেখ্য এই ল্যাঙ্গুয়েজ ছাড়াও আমার আরো কিছু ল্যাঙ্গুয়েজ জানা ছিল কিন্তু পেশাদার কাজ কখনো করা হয়ে ওঠেনি তাই শুরুতে বেশ বিব্রত ছিলাম। কাজ শুরু করার পর দেখলাম অনেক কিছুই পারিনা!! হাল ছাড়িনি, হাল ছাড়তে হয়নি কারন আমার সাথে গুগল ছিল! যেকোন সমস্যায় পড়লেই গুগলে সার্চ দিতাম এবং সমাধানও পেয়ে যেতাম। যেকোন কাজের জন্য আসলে ইন্টারনেটে প্রচুর রিসোর্স রয়েছে। শুধু তাঁদের খুঁজে বের করে ব্যবহার করতে জানতে পারলেই হয়।
প্রথম কাজ ওডেস্কে
আমি যখন বিড করা শুরু করি এবং যখন শুরু করি তখন আমার জব কোটা ছিল ১৫। আমি খুব সাবধানে আমার পক্ষ্যে যে কাজগুলো সম্পূর্ন ভাবে করা সম্ভব এবং করতে পারব সেরকম কিছু জবে বিড করি। সম্ভবত একদিনে ৮টা জবে বিড করেছিলাম। হয়ত আমার ভাগ্য ভাল কিংবা আমি সঠিক পদ্ধতিতে বিড করেছিলাম অথবা দুটোর কারনেই সেদিনই রাত ৩টার দিকে একটা ইন্টারভিউ এর অফার পাই। বায়ারের সাথে স্কাইপে কথা হয় এবং কাজটি আমাকে দিয়ে দেয়। কাজ পেয়ে খুশি হওয়ার বদলে আমার উত্তেজনা বেড়ে যায় এবং ঠিকঠাক শেষ করতে পারব কিনা এই ভয়ে সারারাত না ঘুমিয়ে কাজ করতে থাকি এবং উত্তেজনাবশত সকালের মধ্যেই একটা ওয়েবসাইট দাঁড় করিয়ে ফেলি! যদিও আমার কাজ শেষ করার সময়সীমা ছিল ৭ দিন কিন্তু পরেরদিনই আমার যতটুকু করার কথা ততটুকু করে দিই। বায়ার কাজে সন্তুষ্ট হয় এবং সাথে সাথেই ডলার পাঠিয়ে দেয়। তখনের অনুভূতিটা ছিল আসলেই অন্যরকম!! উল্লেখ্য কাজটি ছিল একটি ওয়েবসাইট তৈরির কাজ যার বাজেট ছিল ৫০ ডলার এবং আমি বিড করেছিলাম ৩০ ডলারে। কিন্তু বায়ার আমাকে পরেরদিন দিয়েছিল ১০০ ডলার!
কাজ এবং কাজ
প্রথমে ক্লায়েন্টের প্রজেক্টটি শেষ করার পর আমি দ্বিতীয় কাজের জন্য কয়েকমাস বিড করার সুযোগ পাইনি! কারন ওই ক্লায়েন্ট পরেরদিন আমাকে না বলেই নতুন একটা প্রজেক্টে হায়ার করে এবং সেটা ছিল ঘন্টাপ্রতি কাজ। শুরুতে আমি প্রফাইলে আওয়ারলি রেট পাঁচ দিয়ে রেখেছিলাম এবং সে ওই রেটেই আমাকে কাজ করার ইনভাইটেশন পাঠায়। আমিও স্বানন্দে গ্রহন করি এবং বেশ কয়েকটা প্রজেক্ট সফলভাবেই শেষ করি। এরপর আর কাজ খোঁজার জন্য আমাকে সময় খরচ করতে হয়নি বরং নিজের পড়াশোনা এবং অন্যান্য কাজের ফাঁকে প্রজেক্টের কাজ করতে থাকি...
উল্লেখ্য তার সাথে আমার কমিউনিকেশন খুব ভাল ছিল এবং লোকটা বেশ রসিকও! আমার কাছে মনে হয় ক্লায়েন্টদের সাথে ঠিকঠাক যোগাযোগ এবং ভাল সম্পর্ক তৈরি করতে পারলে নতুন কাজ পাওয়ার জন্য তেমন কিছু করতে হয়না। আমার প্রথম ক্লায়েন্টের সাথেই আমি অনেক ভাল একটা সম্পর্ক তৈরি করি এবং এখনো তার যেকোন কাজের জন্যই আমার ডাক পড়ে!
নিজেকে আরো বিস্তৃত করা
আসলে মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়া এবং করার পর আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। আমি বিশ্বাস করতে শিখি নিজের ভিতরে কিছু থাকলে আমি যেকোন জায়গায় বসে অন্তত মার্কেটপ্লেস থেকে আয় করতে পারব। তাই আরো নতুন নতুন জিনিস শেখার জন্য সময় দিতে থাকি। টেকনোলজির যেকোন ব্যাপারে আমার আগ্রহ আগে থেকেই ছিল কিন্তু এটা থেকে আয় করার পর আমার আগ্রহ আরো বহুগুণে বেড়ে যায়। তখন আর নতুন কিছু শেখার জন্য সময় পার করলেও খুব বেশি খারাপ লাগেনা বরং নিজের মধ্যে নতুন নতুন দক্ষতা যোগ করতে পেরে আরো আত্মবিশ্বাসী হই। শিখে নিতে থাকি আরো কিছু প্রয়োজনীয় ল্যাঙ্গুয়েজ ও টেকনলজি।
কাজ করা একসাথে...
এরই মাঝে পরিচয় হয় রাহাত হোসেন নামের আরেক স্বপ্নবান যুবকের সাথে। আমরা কিছু আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম mrLab নামে একটি ভার্চুয়াল টীমের মাধ্যমে। মার্কেটপ্লেস ছাড়াও আরো কিছু নতুন কাজ করার সুযোগ পাই। তারপর কাজ করতে থাকি একসাথে এবং সাথে জন্ম নিতে থাকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার স্বপ্ন... ...
উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা
আমরা কয়েকজন একসাথে বিভিন্ন কাজ করছিলাম ঠিকই কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু সমস্যায় পড়ে যেতে হত। প্রয়োজন হত একসাথে বসে কিছু সমস্যা সমাধান করার। দুইজনের বাসার দূরত্ব ছিল অনেক তাই মাঝে মাঝে ধানমন্ডি লেক, স্টার কাবাব বা টিএসসি’র মাঠ হয়ে উঠতো আমাদের অফিস! আমরা অনুভব করলাম আমাদের (সাথে আরো কয়েকজন ছিল) একসাথে বসে কাজ করার মত একটা জায়গা দরকার। একে অপরকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য দরকার মাথার উপর একটি অভিন্ন সিলিং!
কিন্তু বললেই তো আর হয়ে যায়না! একটা অফিস নেয়া এবং সাথে আরো কিছু অপরিহার্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া, অফিসের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা ইত্যাদি বেশ একটা খরচান্ত ব্যাপার যা বহন করার ক্ষমতা আমাদের ছিলোনা। যেহেতু আমাদের কিছু নেই তাই কোন ব্যাংকও আমাদের পাশে দাঁড়াবে না।
কিন্তু তারুন্যের কাছে হার মানতে বাধ্য হল সব বাধাবিপত্তি! আমরা শুরু করার মত প্রয়োজনীয় অর্থ পেয়ে গেলাম। পেয়ে গেলাম স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় রসদ।
শুরু হল মাস্টারপ্ল্যান কারন আমরা শুরু করেই মুখ থুবড়ে পড়তে চাইনি। যদিও বেশ কিছু বিদেশী ক্লায়েন্ট আমাদের ভরসা ছিল তথাপি আমরা দেশেও দেশের হয়ে কিছু করার চিন্তা করলাম। শুধু মার্কেটপ্লেসের কাজ করে টাকা উপার্জন করতে চাইনি, চেয়েছি বৃত্তের বাইরে আরো কিছু একটা করতে।
স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগে বেড়ে ওঠা বেয়াড়া স্বপ্নগুলোকে একটা নির্দিষ্ট ফ্রেমে নিয়ে আসা হল। সাথে যোগ হল কিছু নতুন মিশন... নতুন ভিশন...
আমরা যখন উদ্যোক্তা
অতঃপর ২০১২ এর নভেম্বরে নিজেদের একটা স্থান খুঁজে পেলাম। একটা নতুন অফিস নিয়ে নিলাম এবং জন্ম নিল ZOVOXZ নামের একটি সম্ভাবনা! নিজেদের মত করে অফিস সাজাতে লাগলাম। আমরা নিজেরাই মাঝে মাঝে আর্কিটেক্ট আবার নিজেরাই ঘাম ঝরানো শ্রমিক। গ্রিন রোডের এ.কে কমপ্লেক্সের নবম তলায় তৈরি হল আমাদের স্বপ্ন! তৈরি হল ZOVOXZ LTD. নামের একটি কোম্পানি যার প্রত্যেকটি সদস্যের বয়স ২৫ এর কম কিন্তু চোখেমুখে স্বপ্নের কোন অভাব নেই, সারাদিন পরিশ্রমের পরেও শরীরে নেই কোন ক্লান্তি! কারন আমরা আমাদের কাজকে ভালবাসতে শিখেছিলাম!
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২! কিছু কাছের মানুষের ভালবাসা ও শুভকামনায় শুরু হল আমাদের পথচলা...
আমরা উদ্যোগ নিয়েছি নিজেদের স্বাবলম্বী করার সাথে আরো অনেককেই স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দেয়ার।
আমাদের নিজস্ব কিছু আইডিয়া আছে যেগুলো বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আমরা একসাথে এক ছাদের নিচে কাজ করে যাচ্ছি। মূলত মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ নিয়ে সেগুলো নিজেরা করে থাকি এবং দেশীয় কাজগুলোও করি। কাজ করতে করতে আমাদের অর্জিত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রতি শুক্রবার আমাদের অফিসে ফ্রী কনসাল্টেশনের ব্যবস্থা রেখেছি যেন নতুনদের দিক-নির্দেশনা দিতে পারি। অনেকেই ইতোমধ্যে আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে কাজ শুরু করছেন। তাছাড়া প্রতিমাসে ক্যারিয়ার সহায়ক দুটি বই প্রকাশ করে বিনামূল্যে বিতরনের উদ্যোগ গ্রহন করেছি। এ ছাড়াও নতুনদের মার্কেটপ্লেসে কাজ করার জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য সীমিত আসনের এবং সাধ্যের মধ্যে কিছু প্রফেশনাল ট্রেনিং এর ব্যবস্থা আছে। আমরা আরো কিছু ভবিষ্যৎ উদ্যোগ গ্রহন করেছি যার লক্ষ্যে আমরা অবিরাম কাজ করে যাচ্ছি...
শেষকথা
শুরু করেছিলাম “আমি” বা আমাকে এবং আমার ফ্রীল্যান্সিং দিয়ে কিন্তু একা শেষ করতে পারলাম না! যোগ হয়ে গেল আরো কিছু স্বপ্ন এবং একটি সম্পূর্ন নতুন “উদ্যোগ”!! মানে আমরা এখন একেকজন গর্বিত উদ্যোক্তা কিন্তু শুরুটা হয়েছিল ফ্রীল্যান্সিং দিয়ে । ফ্রীল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেস থেকে আমরা আত্মবিশ্বাস এবং জয়ের পুঁজি পেয়েছিলাম এবং নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলাম। আমরা আমাদের প্রাথমিক স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পেরেছি। অপেক্ষা করছি সবাইকে নিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে সমৃদ্ধ জন্মভূমি গড়ে তোলার

The Won Blog Of EARN FOR TEICKS. The Blog Created by Bijoy Kumar Biswas. Designed by বিজয়*বিজন*বিজু