Popular Post

zwani.com myspace graphic comments

Sunday, August 25, 2013

ইচ্ছাটা যেখান থেকে শুরুঃ

ক্লাস 7/8 এ যখন “আমার জীবনের লক্ষ্য” বা “Aim in life” রচনা পরতাম তখন থেকে মনে মনে ভাবতাম বড় হয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হব। কিন্তু আমার ফ্যামিলিতে বা আসেপাশে গাইডলাইন দেবার মত কেউ ছিল না। ফলে ক্লাস নাইনে কমার্স নিয়ে নেই। কলেজে ভর্তি হবার পর জানতে পারি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে CSE পড়তে হবে এবং যার জন্য ব্যাকগ্রউন্ড সাইন্স হতে হবে। মনে বড় দুঃখ পাই ব্যাপারটা জেনে। তখন এক বড় ভাই বলল মন খারাপ করো না তুমি। পড়াশুনার পাশাপাশি নিয়মিত এটাকে নিলে পড়ে থাকলে কিছু একটা করতে পারবা। তার কথা মতই করলাম।
তো অনেক মানুষের কাছে প্রথমে সাহায্যের জন্য যেতাম কি ভাবে কি শিখব তা জানার জন্য। কিন্তু সবাই কেমন যেন করত। দেখাতে চাইত না। বাসায় থেকেও বলত আমি বাসায় নেই যদি কিছু শিখার জন্য বাসায় চলে যায় সেই ভেবে। একটা ঘটনা এখনও মনে আছে এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে কম্পিউটার ধরে একটু বিভিন্ন অপশন দেখছিলাম (যখন আমার কম্পিউটার ছিল না) হঠাৎ বন্ধু আসে মাউসটা সরিয়ে নিয়ে বলে আরে গুতাগাঁতি কইরা সব প্রবলেম কইরা দিব তো ... !
আমার ইন্টার পরীক্ষার অনেক পরে কম্পিউটার হাতে পাই। ২০০৯ এর শেষের দিকে। তখন থেকে শুরু হয় আমার কম্পিউটার গুতাগুতি। তখন ইচ্ছা করি কম্পিউটারের যত কিছু আছে সব শিখব। তখন ওয়েব ডেভলপমেন্ট, এস.ই.ও এগুলো কিছু জানতাম না। শুধু বুঝতাম ছবি এডিটিং করা। সেই থেকে পরিচয় Photoshop, Illustrator এর সাথে। প্রথম থেকে সাহায্যের জন্য অনেক মানুষের কাছে গিয়েছি কেউ কোন সাহায্য করত না। পরে রাগে ক্ষোভে গুগলকে ব্যবহার করা শুরু করলাম। যেখানে বেজে যেতাম গুগল কে ব্যবহার করতাম। আর নিজে নিজে প্রচুর পরিমানে অপশন টিপে টিপে দেখতাম কি হয়। প্রতিদিন ১২/১৪ ধন্টা সময় দিতাম পিসিতে। এভাবে মোটামুটি গ্রাফিক্সের কাজ অনেকটা শিখে ফেলেছি।
এরপর কি যেন গুগল সার্চ করতে করতে টেকটিউনস এর লিঙ্কটা পাই। সেখান থেকে জানি ওয়েব ডেভলপমেন্ট কি, এস.ই.ও কি এমন আরও অনেক কিছু। তখন থেকে আবার শুরু করি শেখা। ঘোড়ার মত দৌড়িয়েছি শেখার জন্য। এখনও মনে আছে প্রথমে গুগলে সার্চ দেই “How to I learn web development” তারপর থেকে শুরু শিখা। অনেক গুলো গাইড লাইন দেখে বুঝতে পারি কি কি শিখতে হয় Web Development এর জন্য তারপর শিখতে শুরু করি একে একে HTML, CSS, PHP, MySQL, WordPress ইত্যাদি। প্রথম প্রথম তো সুন্দর সুন্দর ওয়েবসাইট পাইলেই Ctrl + U চেপে সোর্স কোডও দেখতাম অনেকক্ষণ। বিভিন্ন থিম বা টেমপ্লেট নামিয়ে নোট প্যাডে ওপেন করে বসে বসে পরতাম আর মাঝে মাঝে একটু একটু এডিট করে দেখতাম কি হয়। মাঝে মাঝে কোড পড়তে পড়তে মনে হত যেন মাথা ঘুরাচ্ছে। ধৈর্য হারিয়ে ফেলতাম। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বা বাহিরে হাটাহাটি করে আবার শুরু করতাম। আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ সে আমাকে অনেক ধৈর্য দিয়েছিল, না হলে এভাবে একটা ১২/১৪ ঘণ্টা কাজ শিখা অনেক কষ্ট সাধ্য ছিল। হয়ত পারতামই না।
আর একটা মজার ব্যাপার হল আমার মুভি দেখের নেশা আছে। অনেক মুভি দেখি। তো মুভি দেখার সময়টা কোন কিছু শুখতে পারব না বলে মনিটরের অর্ধেকে কাজের কোন কিছু রাখতাম বাকি অর্ধেকে মুভি চালিয়ে রাখতাম। মজার ব্যাপার হল মুভি শেষ কিন্তু মনে মনে বলছি মুভিতে কি হল কয়েকটা সিন ছাড়াতো আর কিছুই মনে নেই !!! তখন আবার চালু করতাম মুভিটা। এভাবে একটা মুভি ২/৩ বার দেখতাম।
আমি শেখার সময় কখনও চিন্তা করি নি এটা নিয়ে ইনকাম করব। নিজে টিউশনি করতাম; তা থেকে যা পেতাম হয়ে তাতে মাস কাভার হয়ে যেত কারন সারা দিনই তো বাসায় থাকতাম পিসি নিয়ে। আমার যেটা ইচ্ছা ছিল – কম্পিউটারের সব কিছু শিখব সব। সেই ইচ্ছা পূরণের জন্য সেই তখন থেকে লেগে আছি এখন পর্যন্ত। যদি টাকা খরচ করে কোন প্রতিষ্ঠানে যেতাম তাহলে হয়ত আমার এত কষ্ট করা লাগত না। কিন্তু নির্ভরযোগ্য কোন প্রতিষ্ঠান পাই নি তাই যাওয়া হয়নি। আর সবচেয়ে বড় কথা আমার কোন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিখতে মনে চায় নি। কারন একটা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হইছিমাল(Basic Computer শিখার জন্য) সেই প্রথম দিকে মাসখানেকের মত ছিলাম; যা শিখিয়েছে বা যে ভাবে শিখিছে তাতে পেট ও মন দুটাই ভরে গেছে। সেগুলো দিয়ে কিছুই লাভ হয় নি।

অনলাইনে ইনকামের শুরুটা যে ভাবে হলঃ

এবার আমার অনলাইনে ইনকামের শুরুটা বলি। খুব অদ্ভুদ ভাবে শুরুটা হয়। আগেই বলেছি শেখার সময় কখনও মনে চিন্তাও আনি নি যে ইনকাম করব এটা নিয়ে। ব্লগিং করতে ভাল লাগত তাই ব্লগিং করতাম। ব্লগিং করে মানুষকে বিভিন্ন কিছু শিখাতাম। অন্যের সাথে অনেক কিছু শেয়ার করতাম। সেই সুবাদে অনেক মানুষের সাথে পরিচয় ঘটে। অনেক মানুষের সাথে পরিচিতি লাভ করি। এর মধ্যে অনেক গুলো প্রবাসী মানুষও ছিল। তাদের সাথে প্রায় সময় চ্যাট হত। এমনই একজন প্রবাসী এক ভাইয়ের সাথে একদিন চ্যাট করতে করতে সে হঠাৎ বলল তুমি কি কি কাজ পার? আমি বললাম গ্রাফিক্স আর ওয়েব ডেলপমেন্ট। তখন সে আমাকে বলল আমার একটা ওয়েব সাইটের জন্য একটা ব্যানার ডিজাইন দিতে পারবা? আমি বললাম আচ্ছা দিচ্ছি। আমার বানানো ব্যানারটা তার অনেক পছন্দ হয়। সে ওটা ব্যবহার করে। তারপর আস্তে আস্তে জানতে পারলাম সে যেই দেশে থাকে সেখানে তার একটি IT Firm আছে। সেই থেকে তার কোম্পানির কোন ডেভলপমেন্ট এর কাজ বা গ্রাফিক্সের কাজ আসলে আমাকে দিত। এটা হল অনলাইনে ইনকাম শুরু। এর পর থেকে ব্লগিং এবং বিভিন্ন ফোরামে মানুষকে সাহায্য করতাম ওয়েব ডেভলপমেন্ট বিষয়ে সেখান থেকেও বেশ কিছু বিদেশি বায়ারদের সাথে যোগাযোগ হয়ে যায়। আল্লাহ্‌র অশেষ রহমত আমাকে কখনও বিভিন্ন ফ্রিলেন্সিং মার্কেট প্লেস গুলোতে দৌড়াতে হয়নি। প্রতি মাসেই সরাসরি বায়ারদের কাছ থেকে কাজ পেয়েছি। এগুলোর সাথে আস্তে আস্তে আমাদের দেশের লোকাল কাজ গুলোও করা শুরু করি। এভাবে আমাদের দেশের মধ্যেও বেশ কিছু ক্লাইন্ট হয়ে যায়।
কাজের চাপ আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো। তাই ২০১১ তে mrLab নামে একটি টিম গঠন করি। সেখানে বেশ কিছু ফ্রেন্ড মিলে একসাথে কাজ করতাম। রাস্তা-ঘাটে, মাঠে, ক্যান্টিনে টিম মেম্বাররা মিলে কাজের প্লান করা, কাজ করা ইত্যাদি চলত। টিমের সবাই মিলে বেশ ভাল কাজ করলাম ১ বছর।
টিম মেম্বারদের নিয়ে আস্তে আস্তে আগাতে থাকি এবং স্বপ্ন দেখতে থাকি একজন আইটি উদ্যোক্তা হবার। স্বপ্ন দেখতে দেখতে এই তো কিছু দিন আগে (১৬ ই ডিসেম্বর ২০১২) এ ZOVOXZ LTD.(IT Firm) এর যাত্রা শুরু করি। এখন সেই আগের কাজ গুলোই একটু প্রফেশনাল ভাবে করি এই আর কি। আমি এখনও সেই আগের মতই ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইন্ট এবং দেশি ক্লাইন্ট নিয়ে সরাসরি কাজ করছি এবং ভবিষ্যতেও করব। সেই প্রথম থেকে মানুষকে সাহায্য করে এসেছি এখনও করছি। আমার কাজের পাশা পাশি মানুষকে সাহায্য করার জন্য এবং দেশের তরুনদের টেকনোলজিতে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য ২ টা প্রোজেক্ট এ কাজ করছি। ইনশাল্লাহ খুব শীঘ্রই সবার মাঝে আমার প্রোজেক্ট গুলো তুলে ধরতে পারব। এতে আমাদের দেশ তথা তরুনদের বেশ উপকার হবে। বহু কষ্ট, অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আজ এই স্থানে আসতে পেরেছি সে জন্য আল্লাহ্‌ কাছে শুকরিয়া জানাই।
আমার জীবনের অনেক কিছু আমি বাদ দিয়েছি। অনেক কিছু সরিয়ে দিয়েছি কিন্তু কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ এখনও সরে যায় নি। শিখার ইচ্ছা, আগ্রহ এখনও প্রবল হয়েছে। আর এই ইচ্ছা শক্তির কারনেই এখন এত কিছু শিখতে পেরেছি এবং এই স্থানে আসতে পেরেছি।
এই ছিল আমার ফ্রিলেন্সিং জীবনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।

The Won Blog Of EARN FOR TEICKS. The Blog Created by Bijoy Kumar Biswas. Designed by বিজয়*বিজন*বিজু